২০২০ সালে গোলমেলে অবস্থা ড্রাইভিং লাইসেন্সে

তিন চেয়ারম্যান বদলেও লাইসেন্সের গতি ফেরেনি বিআরটিএতে, বছর জুড়ে ভোগান্তি

Samsuddin Chowdhury    |    ১২:২৭ পিএম, ২০২০-১২-৩১


তিন চেয়ারম্যান বদলেও লাইসেন্সের গতি ফেরেনি বিআরটিএতে, বছর জুড়ে ভোগান্তি

সামসুদ্দীন চৌধুরীঃ সারাদেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএর ৫৭ সার্কেলে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত প্রিন্টের অপেক্ষায় ছিল ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮টি ড্রাইভিং লাইসেন্স। ছবি, আঙুলের ছাপ দেওয়া, নতুন আবেদনসহ ১২ লাখের বেশি আবেদনকারী বিআরটিএর কর্মকর্তাদের দুয়ারে দুয়ারে লাইসেন্সের জন্য ঘুরছেন। করোনা মহামারিতে দুই মাস বন্ধ ছিল বিআরটিএর কার্যক্রম। চালকের পরীক্ষা, বায়োমেট্রিক কার্যক্রম পাঁচ মাস বন্ধ রাখার পর গত ২৩ আগস্ট থেকে আবারও শুরু করেছে বিআরটিএ। তবে গত দুই বছর ধরে লাইসেন্স সংকট চলছে। কোন প্রতিষ্ঠান শতকোটি টাকার লাইসেন্স সরবরাহের কাজ পাবে, তা নিয়েই মূলত এই টানাপোড়েন হয়েছিল। দরপত্র বাতিল ও পুনরায় কার্যাদেশ প্রদান এবং রিভিউ আপিল ও হয়েছিল এগুলো নিয়ে। ২০২০ সাল জুড়ে বিআরটিএর ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সবাইকে। ৫ থেকে ১০ বার বিআরটিএর সংশ্লিষ্ট সার্কেল ঘুরেও সোনার হরিণ ড্রাইভিং লাইসেন্সের দেখা পায়নি কেউ। 

এর মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে বিআরটিএর তিন জন চেয়ারম্যান। বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিউর রহমানকে ও এসডি করে ২০১৯ সালের অক্টোবরের দিকে বিআরটিএতে কাজের গতি ফেরাতে অতিরিক্ত সচিব ড. কামরুল আহসানকে দায়িত্ব দেয় সরকার। তবে কোন কিছু ঘুছিয়ে নেওয়ার আগে চলতি বছরের ২৯ মার্চ অবসরে যান তিনি। তখন বিআরটিএর পরিচালক প্রশাসন মো. ইউসুপ আলী মোল্লাকে চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত ভার দিয়ে চলতি বছরের ২২ জুন পর্যন্ত কার্যক্রম চালিয়ে নিয়েছিল সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রণালয়। তখনও ড্রাইভিং লাইসেন্সের কোন গতি ফিরেনি। এরপর বিআরটিএর আবারও ভারমুক্ত চেয়ারম্যান পেলেন। নতুন দায়িত্বে আসলেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নুর মোহাম্মদ মজুমদার। 

ডুয়েল ইন্টারফেস পলিকার্বনেট স্মার্টকার্ডে ছাপা ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহের কাজ দিয়ে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাজ সিকিউরিটি প্রিন্টার্স প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে গত ২৯ জুলাই চুক্তি সই করেছে বিআরটিএ। এর আগে ১৩ জুলাই প্রতিষ্ঠান 'নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড' পায়। তবে এর বিরুদ্ধে 'রিভিউ' করেছে মাদ্রাজ সিকিউরিটির সঙ্গে দরপত্রে অংশ নেওয়া সেলপ স্মার্টকার্ডস অ্যান্ড সলিউশনস। প্রতিষ্ঠানটির অভিযোগ, মাদ্রাজ সিকিউরিটি বিভিন্ন দেশে কালো তালিকাভুক্ত। তারা কারসাজি করে কাজ পেয়েছে। এরই মধ্যে মূল্যায়ন কমিটি রিভিউ মিটিং করেছে। নালিশ নিষ্পত্তি না হলে তা মামলা পর্যন্ত গড়াতে পারে। এদিকে, চুক্তি সই হলেও মাদ্রাজ সিকিউরিটির কাজ শুরু করতে আরও কয়েক মাস লেগে যেতে পারে। তাই যাদের এক বছর পরের তারিখ দেওয়া হচ্ছে, তারা ওই সময়ে লাইসেন্স পাবেন- এ নিশ্চয়তা নেই। লাইসেন্স নিয়ে এ টানাপোড়েন বছরখানেক ধরে চলছে।

বর্তমানে লাইসেন্স সরবরাহের দায়িত্বে থাকা টাইগার আইটি ২০১৬ সালে পাঁচ বছরের জন্য ১৫ লাখ কার্ড সরবরাহের দায়িত্ব পায়। কিন্তু চাহিদার কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই ১৫ লাখ লাইসেন্স প্রিন্ট দিতে হয়। বিশ্বব্যাংকের কালো তালিকাভুক্ত এ প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্বতী দায়িত্ব দিয়ে বাড়তি কার্ড নিতে পারেনি বিআরটিএ। ফলে গোলমেলে অবস্থা তৈরি হয় ড্রাইভিং লাইসেন্সে।

চাকরিপ্রার্থী বা বিদেশগামীরা এতে সবচেয়ে বিপাকে আছেন। দেশে পরীক্ষা পাসের সনদ দেখিয়ে গাড়ি চালানো গেলেও চাকরিতে ও বিদেশ কাজে যেতে এ সুযোগ নেই। বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সাধারণ ছাপা লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। তবে তা খুব বেশি কাজে লাগে না।